Header Ads

শিশুর ওজন বাড়াতে কেন প্রতিদিন আলু খাওয়াবেন

আজকাল মায়েরা শিশুদের খাবার নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকেন। তারা হতাশাগ্রস্ত থাকেন তাদের সন্তানদের খাবার নিয়ে। বিশেষ করে তারা ভাবেন আগেকার দিনে শিশুরা অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান হলেও বর্তমানে কেন রুগ্ন থাকে। আসলে এর প্রধান কারণ হচ্ছে শিশুদের খাবারের তালিকা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। পূর্বের খাবারের যে তালিকা ছিল মায়েদের বর্তমানের মায়েরা সেটি পরিবর্তন করে ফেলেছেন।  আমরা আজকে আপনাদের এমন একটি খাবারের সাথে পরিচিত করাবো যেটি শিশুদের জন্য সুপার ফুড এবং এটি বাচ্চাদের ওজন বাড়ানোর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ খাবার। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে আপনি বুঝতে জানতে পারবেন খাবারের তারতম্য শিশুদের ওজন বাড়ানোর সঠিক উপায়।

আজকে আমরা যে খাদ্য নিয়ে আলোচনা করবো সেটির নাম আলু। আলু বাচ্চাদের জন্য অতি জরুরী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। এটি বিশ্বের অন্যতম বহুল চাষ-কৃত ব্যবহৃত একটি সবজি, আমাদের খাদ্য তালিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সহজলভ্য, স্বাদের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় এবং বিভিন্ন রকম রান্নার উপযোগী হওয়ায় এটি অধিক জনপ্রিয়। শুধু স্বাদের জন্যই নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিভিন্ন প্রকারের আলুর মধ্য হতে মিষ্টি আলু সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, তবে আমরা আজকে গোল আলু নিয়ে আলোচনা করবো।

আলুর পুষ্টি উপাদান সমূহ:

আসুন আমরা প্রথমে জানার চেষ্টা করি আলুর মধ্যে কী ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে সাধারণত যে পুষ্টি উপাদান গুলো থাকে সে গুলো হচ্ছে:

শর্করা

৪৫ গ্রাম

প্রোটিন

গ্রাম

ফাইবার

৬ গ্রাম

কোলিন

৭%

ভিটামিন সি

৬৮%

ভিটামিন কে

৬%

ভিটামিন বি১

২১%

ভিটামিন বি২

৮%

ভিটামিন বি৩

২৩%

ভিটামিন বি৫

১৫%

ভিটামিন বি৬

৭০%

সোডিয়াম

১%

পটাশিয়াম

৩১%

ক্যালসিয়াম

৬%

ম্যাগনেশিয়াম

১৭%

ফসফরাস

২৬%

আয়রন

৩৪%

ম্যাঙ্গানিজ

১৭%

সেলেনিয়াম

২%

কোপার

২৮%

জিংক

৮%












কেন শিশুকে আলু খাওয়াবেন?

উপরের তালিকাটি দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আলু কতখানি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। এটি দামে সস্তা ও দেশি খাবার হওয়ার কারণে মায়েরা তাদের শিশুদের খাবারের তালিকায় রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। যার ফলে আজকের দিনে শিশুরা স্বাভাবিক পুষ্টি ও ভিটামিন থেকে বঞ্চিত হয়। একথা বলে রাখা ভাল, আলু শিশুদের পাশাপাশি বড়দের জন্যও সমান ভাবে উপাদেয় খাবার। এটি বড়দের ও স্বাস্থ্য ভাল করতে ও শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে কেউ যদি অতি স্থূল বা ব্লাড সুগারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে তার আলু এড়িয়ে চলা উচিত। এখন আমরা আলুর পুষ্টিগুণ অন্যান্য খাবারের সাথে তুলনা করে দেখবো।

১. শর্করা:

আলুতে শর্করা বা Carbohydrate এর পরিমাণ ৪৫ গ্রাম। শরীর মোটা তাজা ও স্বাস্থ্যবান করতে শর্করার দরকার হয় সবচেয়ে বেশি। শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য প্রধান উপাদান হিসেবে শর্করার দরকার সবচেয়ে বেশি।  আপনি জানলে অবাক হবেন একটি ডিমে শর্করার পরিমাণ মাত্র ১ গ্রাম। সুতরাং ৪৫টি ডিমের সমান শর্করা থাকে মাত্র ১টি আলুতে। আপনার শিশুকে প্রতিদিন একটি আলু খাইয়ে যে পরিমাণ শর্করা যোগাতে পারবেন সেই পরিমাণ শর্করা যোগাতে বাচ্চাকে প্রতিদিন ৪৫টি ডিম খেতে দিতে হবে। এবার যদি আমরা মাংসের দিকে নজর দেয়। মুরগি, ছাগল বা গরুর মাংসে কোনও শর্করা থাকে না। সুতরাং আপনি শিশুকে প্রতিদিন কয়েক কেজি মাংস খাওয়ালেও তার শরীরে ১ গ্রামও শর্করা যোগাতে পারবেন না। ১০০ গ্রাম মাছে শর্করা থাকে ৮ গ্রাম। যার অর্থ একটি আলু সমান আধা কেজি মাছ। সুতরাং একটি আলুতে যে পরিমাণ শর্করা থাকে সেই পরিমাণ শর্করা যোগাতে আপনার শিশুকে প্রতিদিন আধা কেজি মাছ খাওয়াতে হবে।  আপনার শিশুর ওজন যদি আপনি দ্রুত বৃদ্ধি করতে চান তবে মাছ, মাংস ও ডিমের চেয়ে সবচেয়ে বেশি জরুরী প্রতিদিন একটি আলু খাওয়ানো। আমরা জানি, শর্করার অন্যতম উৎস ভাত, রুটি, গম ইত্যাদি। ১০০ গ্রাম ভাত বা রুটিতে মোট শর্করা থাকে ৪৩ গ্রাম। সুতরাং আমরা জানলাম ভাত বা রুটির চেয়ে আলুতে শর্করার পরিমাণ ২ গ্রাম বেশি। আপনি নিজে বা আপনার শিশুকে যদি সারাদিন ভাত না খেতে দিয়ে ৩ বেলা ৩টি আলু খেতে দেন তবে সেটি পুষ্টির দিক থেকে ভাত বা রুটির চেয়ে বেশি উপকারী হবে।  

২. প্রোটিন:

আলুতে প্রোটিন থাকে ৫ গ্রাম। ১০০ গ্রাম ভাত বা রুটিতে প্রোটিন থাকে ৪ গ্রাম। মুরগির মাংসে প্রোটিন থাকে ২০ গ্রাম ও ডিমে প্রোটিন থাকে ১৮ গ্রাম। প্রোটিন আমাদের শরীরে শক্তি তৈরি করে। এই উপাদানেও আলু ভাত ও রুটির চেয়ে এগিয়ে থাকলেও মাংস ও ডিমের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। আপনার শিশুকে যদি সারাদিনে ৩টি আলু খাওয়াতে পারেন তবে সেটি মাংস ও ডিমের প্রোটিনের সমান হবে। আপনি যদি আপনার শিশুকে ডিম পোচ বা ভেজে খাওয়ান তবে সেটির পুষ্টিমান কমে যায়। দৈনিক ডিম খাওয়ার ফলে আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যা তৈরি হতে পারে, পেট ফাঁপা ও বদ হজমের সমস্যা হতে পারে। বাচ্চাকে যদি প্রতিদিন মাংস খাওয়ান তবে তেল ও মসলার কারণে শিশু পেটের মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে তেলে থাকে Saturated fat, যেটি শিশু সহ সবার দেহের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া আপনি যদি প্রতিদিন মাংসে মসলা ব্যবহার করেন তবে সেটি গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামন্দা, অরুচি, পাতলা পায়খানা সহ নানান ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। শিশুদের খাবারে সাধারণত তেল, হলুদ, লবণ, ঝাল, পেয়াজ ও রসুন ছাড়া অন্য কোনও মসলা ব্যবহার করতে নেই। শিশুর খাবারে যত বেশি তেল ব্যবহার করবেন, শিশু ততই অরুচি ও পেটের সমস্যায় ভূগবে। মনে রাখবেন, মসলার উপকারীর দিকের চেয়ে ক্ষতির দিক গুলো অনেক বেশি। আপনি যখন আপনার শিশুকে নিয়মিত আলু খাওয়াবেন তখন এই সমস্যা গুলো হওয়ার আশংকা থাকে না বললেই চলে।

৩. ফাইবার:

আমাদের খাদ্যে বিশেষ করে শিশুদের খাদ্যে ফাইবার থাকা খুবই দরকার। খাবারে ফাইবার না থাকলে সেটি সহজে হজম হয় না এবং সেই খাবারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করে। আলুতে ৬ গ্রাম ফাইবার থাকে, অন্যদিকে মাছ, মাংস ও ডিমে কোনও ফাইবার থাকে না, তবে ভাতে ২ গ্রাম ফাইবার থাকে। যদি শিশুরা নিয়মিত আলু খায় তবে তাদের হজম শক্তি ভাল থাকে এবং পেট পরিষ্কার ও পায়খানা স্বাভাবিক থাকে। বয়স্করা বা শিশুরা যদি নিয়মিত মাংস ও ডিম খায় তবে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, মুখের স্বাদ কমে যায়, গ্যাস হয় ও হজম শক্তি কমে যায়। ফাইবার সমৃদ্ধ আরও খাবারের মধ্যে রয়েছে ছোলা, ডাল, শিম, মটরশুঁটি, ও সবুজ শাক সবজি।

৪. ভিটামিন সি:

আলুতে আছে ৬৮% ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে সুন্দর করে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি এর সবচেয়ে বড় উৎসের মধ্যে রয়েছে আমলকী, পেয়ারা, কাচা ঝাল, ইত্যাদি। পেয়ারায় প্রায় ১৩৮% ভিটামিন সি থাকে।

৫. ভিটামিন বি:

আলুতে থাকে ২১% ভিটামিন বি১, ৮% ভিটামিন বি২, ২৩% ভিটামিন বি৩, ১৫% ভিটামিন বি৫, ও ৭০% ভিটামিন বি৬। এই উপাদানগুলো মোটামুটি আলু, ডিম, ও মাংসে সমপরিমাণ আছে, কিন্তু ভাতে কম আছে। আপনি আপনার শিশুকে একটি আলু খাওয়ালে শিশুটি যে পরিমাণ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স পাবে ঠিক সমপরিমাণ পাবে ডিম ও মাংস খেলে, কিন্তু ভাত খেলে এই উপাদান গুলো কিছুটা কম পাবে।

৬. অন্যান্য উপাদান সমূহ:

আলুতে আরও বেশ কয়েকটি উপাদান রয়েছে, যেমন পটাশিয়াম ৩১%, ক্যালসিয়াম ৬%, ম্যাঙ্গানিজ ১৭%, ফসফরাস ২৬%, আয়রন ৩৪%, ও ম্যাগনেসিয়াম ১৭%। প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও মেয়ে শিশুদের জন্য দৈনিক আয়রন গ্রহণ করা খুবই দরকারি। আলুতে রয়েছে ৩৪% আয়রন, যেখানে মাংসে আছে মাত্র ১৮% আয়রন। সকল পুষ্টি উপাদানকে একত্রিত করে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে মাংসের ক্যালোরিক ডেনসিটি ৫ হাজার ৯৪, ডিমের ক্যালোরিক ডেনসিটি ১ হাজার ১২৩ এবং খাদ্য হিসেবে আলুর ক্যালোরিক ডেনসিটি ১১ হাজার ৩৫২। সুতরাং বুঝতে পারছেন পুষ্টিগুণে আলু ডিম থেকে ১১ গুণ ও মাংস থেকে দ্বিগুণ এগিয়ে।

শিশুকে আলু কিভাবে খাওয়াবেন?

আশাকরি উপরের আলোচনায় বুঝতে পেরেছেন শিশুদের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আলুর বিকল্প কিছু নেই। আপনি শিশুকে আলু সিদ্ধ, আলু ভর্তা, আলু ভাজি, আলুর দম, ডালও আলু এক সাথে রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এছাড়া শিশুকে নিয়মিত খিচুড়ি খাওয়াতে পারেন। খিচুড়ি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, ওজন বাড়ানো, ও সামগ্রিক পুষ্টি যোগানের শ্রেষ্ঠ খাবার। খিচুড়িতে চাল, ডাল, ও আলু একত্রে থাকার কারণে খিচুড়িকে সকল খাবারের শ্রেষ্ঠ খাবার বলা হয়। 

আলোচনার প্রথমেই বলেছিলাম আজকাল মায়েরা খাবারের তালিকা পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন মায়েরা শিশুদের দামী খাবার খাওয়ানোর ফলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। পূর্বে মায়েরা শিশুদের আলু ও দেশীয় খাবার খেতে দিতো বলে তাদের শরীর থাকতো সুস্থ ও ওজন সমৃদ্ধ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.